বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরদিন থেকে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায় । তাঁর নির্দেশ অনুসারে দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ করতে থাকে । খাজনা-ট্যাক্স আদায় বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়া খান টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করেন। ১০ই মার্চ সরকার এক সামরিক আদেশ জারি করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এর পরও পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনগণ অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৩ই মার্চ সরকার পুনরায় সামরিক আইন জারি করে । ১৪ই মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো একটি অবাস্তব প্রস্তাবের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ফর্মুলা দেন। তবে বঙ্গবন্ধু এসব কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ঐ দিনই ৩৫ দফাভিত্তিক দাবিনামা জারি করেন। সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনসাধারণকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয় ।
বঙ্গবন্ধুর আদেশ জারির পর থেকে শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত । অবস্থার গভীরতা উপলব্ধি করে ইয়াহিয়া খান ১৫ই মার্চ ঢাকা সফরে আসেন। এখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। বঙ্গবন্ধু আলোচনার জন্য রাজি হলেও অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি । ১৬ই মার্চ থেকে ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা শুরু হয়। এরপর ২২শে মার্চ হঠাৎ জুলফিকার আলী ভূট্টো ঢাকা আসেন এবং আলোচনার অংশ নেন। এর মধ্যে ১৯শে মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা জয়দেবপুরে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালালে এর প্রভাব মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনাকে প্রভাবিত করে। মূলত এসময় আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে এদেশের ঘরে ঘরে পাকিস্তানের পতাকার বদলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৪শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্স সংকট সমাধানের শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু আলোচনা অসমাপ্ত রেখে ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার আগে তিনি সামরিক ৰাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়ে যান।
Read more